রবিবারের সকাল থেকেই কলকাতার আকাশে এক ভিন্ন রকমের উত্তেজনা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এবং রাজ্যের বহু জায়গায় সিবিআইয়ের ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে এই অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের নানা প্রান্তে একের পর এক হানায় নেমেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বেলেঘাটার বাড়ি, কেষ্টপুর, বেলগাছিয়া, টালা, হাওড়া—এসব জায়গায় সিবিআইয়ের নজরদারি ও অভিযান চলেছে।
সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ সন্দীপ ঘোষের বেলেঘাটার বাড়িতে সিবিআইয়ের দল পৌঁছায়। প্রথমে বাড়ির দরজা খোলার অপেক্ষায় দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময় কাটানোর পর, অবশেষে আধিকারিকরা ভেতরে প্রবেশ করেন। বাড়িটি কেন্দ্রীয় বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা হয়। তল্লাশি চলাকালীন দুপুরের দিকে আরও বাহিনী সেখানে এসে যোগ দেয়, এবং সিবিআইয়ের অন্যান্য দলের সদস্যরা তাদের অভিযানে সহায়তা করেন।
একই সময়ে কেষ্টপুরে পৌঁছায় আরেকটি সিবিআইয়ের দল। তাদের লক্ষ্য ছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের এক প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তির বাড়ি। এই আধিকারিকের সঙ্গে সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা এই আধিকারিক অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন, কারণ তার প্রভাব হাসপাতালের নানা কার্যকলাপে লক্ষ করা গিয়েছে।
এদিকে, এন্টালিতে হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠের বাড়িতে সিবিআই হানা দেয়। দীর্ঘ তল্লাশির পর বশিষ্ঠকে নিয়ে সিবিআই অন্য একটি জায়গায় যায়, যেখানে আরও তদন্ত চলে। হাওড়ার হাটগাছায় বিপ্লব সিং নামে এক চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহকারীর বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়, এবং তার বিরুদ্ধেও তদন্তকারীদের হাতে বেশ কিছু তথ্য এসেছে।
তাছাড়া, বেলগাছিয়ার জে.কে ঘোষ রোডে এক ক্যাফে মালিকের বাড়িতে এবং টালায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। সব মিলিয়ে, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে দুর্নীতির জাল ছিন্ন করতে সিবিআই শহরের মোট ১৫টি এলাকায় হানা দেয়।
সম্প্রতি, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনা—এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের পর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এসব অভিযোগের কেন্দ্রে ছিলেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। হাসপাতালকে দুর্নীতির কেন্দ্রে পরিণত করার পেছনে তার ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি সরাসরি অভিযোগ তুলে সন্দীপ ঘোষকে হাসপাতালের দুর্নীতির মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার অভিযোগ অনুযায়ী, আরজি করের বিভিন্ন বেআইনি কাজ ও আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সন্দীপ ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা।
দুর্নীতি মামলাটির তদন্তভার সম্প্রতি আদালত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে, এবং আদালতে আপিল করেও কোনো সুরাহা পাননি সন্দীপ ঘোষ। সন্দীপ ঘোষকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা টানা ৯ দিন ধরে জেরা করেছে, এবং শনিবারও তাকে দীর্ঘ সময় ধরে সিজিও কমপ্লেক্সে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর পরেই রবিবারের সক্রিয় অভিযান শুরু হয় সিবিআইয়ের। এবার সবার নজর এই তদন্তের পরবর্তী ধাপে, যেখানে নতুন কোনো তথ্য উঠে আসবে কি না বা গ্রেফতারি হবে কি না, তা নিয়ে সবার আগ্রহ তুঙ্গে।